বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন

News Headline :
রাজশাহীতে অর্ধশত বোতল ফেনসিডিল-সহ মাদক কারবারী গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলে সেজেছে মাঠ, মধু সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে মৌ-চাষীরা রাজশাহীতে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক মিথিলা-সহ গ্রেফতার ২৭ শ্যামনগরে হিংস্র মহিষের আক্রমণে ছয় জন গুরুতর আহত খুনিরা অধরা পাবনায় জুলাই আগষ্ট বিপ্লবে নিহত-আহতদের পরিবার আতংকিত শহীদ নিলয়ের পরিবার ভয়ে মামলা করেনি ভিসি প্রো-ভিসি নিজেরাই কোটার সুবাধে চেয়ারে বসে আছে-রাবি কর্মচারী পাবনায় চাঁদাবাজির মামলায় সাবেক ডিপুটি স্পিকার কারাগারে পাবনায় মোটর সাইকেল ছিনতাই ২জন গ্রেফতার মোটরসাইকেল উদ্ধার রাজশাহীর তানোরে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জামিনুরের বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ শ্যামনগর প্রধান সড়কে বিচালী ইট কাঠ নেটের ঘেরা

অনলাইন জুয়ার কবলে পাবনাসহ দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ

Reading Time: 3 minutes

প্রিন্স তুহিন, পাবনা:
সারা দেশের ন্যায় পাবনার ঈশ্বরদীর যুব সমাজ, শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সী তরুন-তরুনী আসক্ত অনলাইন জুয়া এবং অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন গেমস্ এ। নষ্ট হচ্ছে লেখাপড়া। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। ঘটছে না নানা দূর্ঘটনা। কিশোর কিশোরীদের এনড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় আত্ত্বহত্যার ঘটনাও দেশে কম ঘটেনি।
অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা পৌঁছে গেছে ইট পাথরে গড়া শহর থেকে শুরু করে গ্রাম গঞ্জের আনাচে-কানাচে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে, সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তির। এমন সর্বনাশা নেশায় সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকে। অনলাইন জুয়া চক্রের সদস্যরা মাসে লেনদেন করছে কোটি কোটি টাকা। আর এই টাকা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিদেশী চক্রের হাতে।
ঈাবনার ঈশ্বরদী বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা এই নেশায় আশক্ত। উপজেলার মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, মাড়মী, দরগাবাজার, পাকশী, কালিকাপুর, পারমানবিক এলাকা, ভেড়ামারা লালন শাহ সেতু পশ্চিম দিকে, পদ্মা নদীর মাঝে নৌকা যোগে বসে এই জুয়ার আড্ডা। সন্ধা রাত থেকে শুরু করে পাড়ার দোকান পাটে বসে চলে গভীর রাত পর্যন্ত এই আড্ডা। চলে পাপজি, ফ্রিফায়ার গেম খেলা। শুধু তাই নয় ডিজিটাল যুগে গ্রামেও রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা, রয়েছে ওয়াইফাই সংযোগ। ঘরে বসেও চলছে জুয়ার আড্ডা। আবার পূর্ব পদ্ধতি তাশের মাধ্যমেও চলছে এই আড্ডা। জুয়ার টাকার যোগান দিতে অনেকেই আবার জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে। সৃষ্টি হচ্ছে মাদকসেবী, বাড়ছে কিশোর গ্যাং এর সংখ্যা।
একটি সুত্র থেকে জানা গেছে, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকুরীরত অনেকেই এই অনলাইন জুয়ার নেশায় খোয়াচ্ছে তাদের অর্জিত অর্থ। সংসারে নেমে আসছে তার বিরুপ প্রভাব। মাসের বেতন পেলেই এই চক্র বিভিন্ন যায়গায় চালায় অনলাইন জুয়ার আড্ডা। আবার অনলাইনে লুডু খেলার মাধ্যমেও চলছে জুয়া।
উপজেলার দরগাবাজার এলাকার এক যুবক নাম ঠিাকনা প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুলাইয়ের ১ তারিখে ইমদাদ (৩০) নামের এক যুবককে অনলাইনে জুয়া খেলার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশ পরিচয়ে রাতে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং গভীর রাত পর্যন্ত অজ্ঞাতস্থানে রেখে ঐ রাতেই চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
অনলাইন জুয়ার আসর https://onexperience.com । অ্যাপস এর মাধ্যমে এই সাইটে ইমেইল দিয়ে রেজিস্ট্রশনই বেটিং দুনিয়ার প্রবেশদ্বার। তারপরই শুরু হয় টাকার খেলা। এটি বাংলাদেশী টাকায় রকেট, বিকাশ বা এই জাতীয় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নিজ একাউন্টে টাকা জমা নিশ্চিত হওয়ার পরই শুরু হয় খেলা।
অন্য আরেকটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যাটিং কোম্পানী হচ্ছে Bet365 । যার ওয়েব সাইট https://www.bet360.com । এই সাইটে অবশ্য টাকাকে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে ডলারে রুপান্তর করে নিজ একাউন্টে আনা হয়। তার পরই শুরু হয় খেলা।
টাকা দিয়ে পয়েন্ট কেনা। তা দিয়েই বাজি। নেশায় পড়েই লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। আর কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। জুয়ার রাজ্যে যাদের পরিচয় মাস্টার এজেন্ট, সুপার এজেন্ট, লোকাল এজেন্ট নামে। এখানে জুয়া খেলতে লাগে পিবিইউ বা পার বেটিং ইউনিট। যার এক ইউনিটের দাম একশ’ টাকা। ব্যবহারকারী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেয় লোকাল এজেন্টকে। তার কাছ থেকে পায় মাস্টার এজেন্ট। তারপর সুপার এজেন্টের হাত হয়ে টাকা পাচার হয় দেশের বাইরের থাকা সুপার অ্যাডমিনের কাছে। ফিরতি পথে পিবিইউ পৌঁছায় ব্যবহারকারী হাতে। শুরু হয় জুয়া। যোগাযোগ চলে বিদেশি নাম্বারের হোয়াটস্যাপে। ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ।
সামনের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ঘিরে জুয়ার মাষ্টার মাইন্ডরা আরও ব্যাপক হারে সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সীদের তাদের এই জুয়ার আড্ডায় সম্পৃক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন লোভনীয় অফারও রয়েছে।
১ জুলাইয়ের গ্রেফতার ও পরবর্তীতে টাকা নিয়ে আসামী ছাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার বলেন, অত্র থানার কোন টিম উক্ত তারিখে কোন অনলাইনে জুয়া খেলার অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করেনি। তিনি আরও বলেন, অনলাইন জুয়ার নেশায় পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকেই। আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আমরা আমাদের সাধ্যমত আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অন লাইন জুয়ার আড্ডা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে অভিভাবক ও ব্যবহার কারীদেরও
বিশেষজ্ঞদের মতে এ জুয়া বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নজরদারীর মাধ্যমে অনলাইন জুয়া খেলা বন্ধ করা না গেলে অনলাইন ক্যাসিনো আরো ভয়াবহ রুপ নেবে। এমন চলতে থাকলে আমাদের কষ্টার্জিত টাকা হরহামেশা বিদেশে পাচার হতে থাকবে। এ জন্য সরকারকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com